কীভাবে জীবন বৃত্তান্ত লিখবেন ? (What to write a CV)

সিভি হচ্ছে চাকরিদাতার সামনে আপনার প্রথম উপস্থাপনা। চাকরিদাতার কাছে আপনার ফাষ্ট লুক হচ্ছে আপনার সিভি। কাজেই সিভির সৌর্ন্দয্য হচ্ছে আপনার সৌর্ন্দায্য। গবেষণার তথ্য অনুযায়ি জানা যায়, চাকরিদাতা সিভি বাছাই করার জন্য ৩০ সেকেণ্ড ব্যয় করে থাকেন। শুধুমাত্র চাকুররির জন্যই সিভি প্রয়োজন হয়না। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে হলে খুব ভাল সিভি না হলে স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত করেনা কর্তৃপক্ষ। কাজেই সিভির গুরুত্ব অপরিসীম।

কীভাবে জীবন বৃত্তান্ত লিখবেন ?
নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট চাকরির জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে জীবন বৃত্তান্তের সার সংক্ষেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জীবন বৃত্তান্তে যোগ্যতার বিষয়গুলো যদি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে কাঙ্ক্ষিত চাকরি নিশ্চিত করার প্রতিযোগিতায় আপনি অনকেটাই এগিয়ে থাকবনে। আর যদি তা না হয় আপনার স্বপ্নের চাকরি কখনই পাবেন না।
আমরা নিখুঁতভাবে জীবন বৃত্তান্ত লেখার জন্য একটি গাইড লাইন তৈরী করেছি এই গাইড লাইন সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনি সহজই বুঝতে পারবেন কোন বিষয়গুলো জীবন বৃত্তান্তে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় একটি নিখুঁত জীবন বৃত্তান্ত তৈরী করলে আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি সহজইে পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।

জীবন বৃত্তান্ত বাছাই প্রক্রিয়া ?
আপনি একটি ভাল জীবন বৃত্তান্ত উপস্থাপনে পরও নিজের যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হতে পারনে । সে জন্য পেশাদারিত্বের বিষয়গুলো আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন করুন। মনে করুন আপনি একজন ব্যাবস্থাপক নিয়োগ করবেন। আপনাকে তখন শত শত এমনকি হাজার হজার জীবন বৃত্তান্ত বাছাই করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় ক্রমানুসারে একটি মানসম্পন্ন তালিকা তৈরীর জন্য আপনি ক্রটিযুক্ত বৃত্তান্তগুলো অবশ্যই বাদ দিবেন।কম সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো প্রার্থী বাছাই করতেই মনোযোগ দিবেন।

আদর্শ সিভি তৈরীর জন্য করণীয়:

১.সিভি সংক্ষেপ করুণ: একটি সিভি সর্বাধিক ২-৪ পৃষ্ঠার মধ্যে হতে হবে। আপনি কতটা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এটা বড় ব্যাপার নয়; আপনার সব বিষয়গুলোকে ২-৪ পৃষ্ঠার মধ্যে উপস্থাপন করতে পারাটাই হচ্ছে প্রধান যোগ্যতা। প্রকৃতপক্ষে, আপনি যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হন তবে , সেটিকে কভার লেটারে খুব ভালভাবে উপস্থাপন করা উচিত, যাতে কর্তৃপক্ষ কাছে কাজের জন্য সেরা ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন।

২. মৌলিক বিষয়: আপনার নাম, জন্মতারিখ, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা (কুরিয়ার বা ডাকযোগে চিঠি পৌছায়) শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্ম অভিজ্ঞতা বিষয়গুলোকে সঠিকভাবে লিখুন। আপনার জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য, উচ্চতা, রক্তের গ্রুপ, ধর্ম দেওয়ার দরকার নাই।

৩. পেশাগত অভিজ্ঞতা : আপনার দায়িত্ব/Responsibility স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। আপনি প্রথমেই উল্লেখ করবেন সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা (Most recent experience) তার পরে এক এক করে (Resume chronological order) ক্রমানুসারে সাজিয়ে লিখুন যা শেষ হবে আপনার সর্বপ্রথম অভিজ্ঞতা দিয়ে। নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষ প্রথমেই দেখেন আপনি সাম্প্রতিক চাকরিতে কি কি দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য দায়িত্ব। বর্তমানের কাজের সাথে সস্পর্কিত নয় এমন বিষয়গুলো ক্রমানুসারে নিচে লিখুন। যা আপনাকে অন্যদের চাইতে অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন বিবেচিত হতে সহায়তা করবে।

৪.দৃষ্টিনন্দন ফরমেট: ফরমেট বলতে বোঝাচ্ছি সিভির পাতাটিকে কি ভাবে সাজাবেন। যেমন: মার্জিন, হেডারের আকার, টাইপ ফেইস, পরিছন্ন ডিজাইন। কোন সিভি পড়ার আগে নিয়োগকর্তা সিভির ফরমেট দেখে থাকেন। পরিছন্ন ফরমেট সহজেই নিয়োগকর্তাদের আকৃষ্ট করে।

৫.সিভি হবে পরিছন্ন: আপনার সিভিটি যেন সহজেই পড়া যায় । পরিক্ষামূলকভাবে অজানা-অচেনা কোন ফন্ট, কালারফুল ডিজাইন ব্যবহার করা উচিত নয়। লেখার ক্ষেত্রে আপনি পরিচিত ফন্ট যেমন: টাইমস নিউ রোমান, এ্যারিয্যাল ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন। ফন্ট ও লে-আউট যেন সুন্দর ঝকঝকে হয়। কোন ক্রমেই ফন্ট সাইজ ১2 কম হওয়া উচিত নয়।

৬.বুলেট চিহ্ন ব্যবহার: সিভিতে ব্যবহৃত বুলেট পয়েন্ট নিয়োগ কর্তাদের দৃষ্টি সহজেই আকর্ষণ করে। আপনার দক্ষতা ও সক্ষমতা গুলোকে পর্যায়ক্রমে সিরিজ আকারে বুলেট দিয়ে লিখুন। প্রত্যেকটি বুলেট পয়েন্ট দুই তিন লাইন দীর্ঘ বর্ণনামূলক লেখার চেয়ে অধিক কার্যকরি।

৭.নিজের গল্প বলুন: সিভি যেন আপনার জীবনের গল্প। খুবই সর্তকতার সাথে আপনার দক্ষতা , যোগ্যতা ও অর্জন গুলোকে সাজিয়ে লিখুন। একজন লেখক যেমন একটি মস্তবড় বই এর সারসংক্ষেপ বইয়ের পেছনে একটি মাত্র প্যারাগ্রাফে যেমন করে তুলে ধরেন। কারণ আপনি নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষকে এখানে convince করছেন। তারা যেন মন্ত্র মুগ্ধের মত পড়তে বাধ্য হয়। আপনি এখানে আপনার যোগ্যতা, অর্জন ও ভুমিকা কি ছিল তা পর্যায়ক্রমে লিখুন। যা চাকরিদাতাকে আকৃষ্ট ও উৎসাহিত করবে অর্থাৎ আপনার সিভি দেখেই যেন আপনাকে নির্বাচনে উৎসাহী হন।
৮.যোগ্যতাকে সঠিকভাবে তুলে ধরুন: যে যোগ্যতা,দক্ষতা চাওয়া হয়েছে সিভি উপস্থাপনে সাম্প্রতক কালে যে দায়িত্বে পালন করেছেন তার প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিন। পুর্বের যে বিষয়গুলো রিলেটেড নয় সে বিষয়গুলোকে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত করুন, কিন্তু বাদ দেওয়ার দরকার নাই। কারণ এগুলো বিশেষ যোগ্যতা হিসেবে তার কাছে গন্য হবে।

৯.সিভির Objectiveপরিমার্জন সংযোজন : আপনার নিজের সিভিকে নিজেই যাচাই করুন। যে পদে আবেদন করেছেন তার সাথে যায়না এমন অপ্রয়োজনীয় বা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিহার করুন।যা আপনার অপেক্ষাকৃত পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করবে।

১০.রিজুম প্রুফ দেখুন: আপনার সর্বোচ্চ আস্থাভাজন বন্ধু/ যিনি শুদ্ধ ইংরেজি জানেন এমন ব্যাক্তিকে সিভির প্রুফ দেখাতে পারেন। আপনার জীবন বৃত্তান্তের মধ্যে যদি কোন বানান ভূল বা ভাষাগত/ Grammatical ভুল থাকে তবে সম্ভাব্য চাকুরিদাতার মনে আপনার সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারনা হবে। প্রত্যেকটি ভুল, নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন কফিনের গায়ে এক একটি পেরেক।

লেখক:

Sakil Malik

Co-Founder , Global Center for Innovation & Learning (GCFIL), USA

https://www.facebook.com/sakil.malik

Scroll to Top